বৃহস্পতিবার, ০৪ জুন, ২০২০ | [email protected]
আপডেট : ০২ এপ্রিল, ২০২০ , সময়ঃ ০৪:৩২ অপরাহ্ন
শাহীন মাহমুদ রাসেল::
দেশে করোনা-সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি নির্দেশনার গুরুত্ব কমছে ধীরে ধীরে। সরকার ঘোষিত হোম কোরেন্টিন মানছেন না কেউ কেউ। নানা অজুহাতে তারা ঘরের বাইরে যাচ্ছে এবং পাড়া, মহল্লার চায়ের দোকানগুলোতে ভীড় জমাচ্ছে। সরকার ঘোষিত মানুষে-মানুষে ‘সামাজিক দূরত্ব’ (তিন ফুট দূরত্ব) কেউই মানছেন না এখন। আগের মতই মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছেন।
মুলত প্রধান সড়কগুলোতে সেনাবাহিনী, পুলিশ প্রশাসনের প্রহরা থাকায় পাড়া মহল্লায় চায়ের দোকানে ভিড় বাড়ছে সকাল সন্ধ্যায়। হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মানছে না মানুষ। গতকাল সদর ও রামুর বিভিন্ন এলাকা, পাড়া, মহল্লা ঘুরে দেখা গেছে এসব চিত্র। কক্সবাজার শহরের প্রধানসড়কগুলো ও সড়ক সংলগ্ন বাজারগুলোতে মানুষের উপস্থিতি না থাকলেও ছোট ছোট অলি-গলিতে ভীড় চোখে পড়ার মত। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানগুলোতে মানুষের জমজমাট আড্ডা তৈরি হয়েছে।
গতকাল সকালে ও দুপুরে পিএমখালীতে অবস্থিত চেরাংঘাটা বাজার, মোহসিনিয়া পাড়া ষ্টশন, দক্ষিণ মিঠাছড়ি, রামুর লম্বরীপাড়া, চাবাগানসহ অধিকাংশ বাজারে উপচে পড়া ভীড় দেখা যায়। মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় কাঁচা বাজার নিতে এসেছে এসব জায়গায়। গায়ে গা ঘেঁষে কেনাকাটা করছেন তারা। তাদের মাঝখানে ১০ ইঞ্চি জায়গাও ফাঁকা নেই। অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করেছেন না। হাতে গ্লাভসও নেই। দোকানি ও ক্রেতার মাঝখানেও তেমন দূরত্ব রক্ষা করা হয়নি। এছাড়া, ক্রেতা-বিক্রেতাকে যেখানে-সেখানে কফ-থুথু ফেলতেও দেখা গেছে।
কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে জানেন। কিন্তু কেনাকাটা করতে এসে পরিস্থিতির কারণে ঠিকমতো সেই দূরত্ব রক্ষা করতে পারেন না বলে দাবি করেছেন তারা। আর বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতাদের দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলেও তারা কেউ শোনেন না। মাস্ক ও গ্লাভস পরা প্রসঙ্গে বিক্রেতারা বলছেন, এগুলো পরলে কাজে অসুবিধা হয়। তাই কম ব্যবহার করেন তারা। তাছাড়া করোনায় তো আর কোন সংক্রমিত হচ্ছে না তাই ভয়ের কিছু নেই।
দক্ষিণ মিঠাছড়ির উমখালী জামে মসজিদের পাশে গলিতে যেনো সব সময়ই একটা ভীড় চোখে পড়ে। এই এলাকায় কিছু চলমান কাজ থাকায় এখানকার শ্রমিকরা চা খেতে বাইরে আসেন এবং আড্ডায় মজে যান। গত দু’দিন থেকে পুলিশ আসছে না তাই আবার এসব কাজ চালিয়ে যাচ্ছে মালিক পক্ষ।
শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদেরকে দিয়ে জোর করে কাজ করানো হচ্ছে। তারা হোম কোরেন্টাইন মানতে চায়, কিন্তু কাজের চাপে মালিকের ভয়ে পারছে না। করোনায় সংক্রমিত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, কপালে থাকলে ভাইরাসে মরব, না থাকলে কেউ ভাইরাস দিয়ে কাবু করতে পারবে না। করোনা একজন মানুষ থেকে অন্য মানুষে সর্বনিম্ন ৩ ফুট ও সর্বোচ্চ ৬ ফুট পর্যন্ত দূরত্বে ছড়াতে পারে। তাই মানুষে-মানুষে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি।
তদারকির বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, সরকারী নির্দেশনা পালনে মাঠ পর্যায়েও সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং যতক্ষণ চলে সেই স্থানের লেকজন ততক্ষণ ঘরে থাকে। প্রচারকারীরা চলে আসলে নির্বোধ মানুষগুলো বাইরে চলে এসে জটলা পাকায় বলে খবর পাচ্ছি। তিনি আরোও বলেন, শহরের বিভিন্ন এলাকাতেও একই অবস্থা। নিজেরা সচেতন না হলে সার্বক্ষণিক তদারকি করা প্রশাসনের পক্ষে কষ্টকর। তবুও আমাদের প্রচেষ্টা থেমে নেই।
প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ যাতে সারা দেশে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য সারা দেশে ১০ দিন পরে আরোও ২ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এই সময়ে নাগরিকদের ঘরে থাকার আহবানও জানিয়েছেন সরকার। নাগরিকদের ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে মাঠে নামানো হয়ে সেনাবাহিনীকেও। জেলা প্রশাসনের সাথে মানুষকে ঘরে রাখার দায়িত্বও পালন করছেন তারা।
কক্সবাজার24 ডটকম (সিবি২৪) এ প্রকাশিত কোন সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
শিরোনাম